
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য সহ্য করা হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আপনারা সতর্ক থাকবেন একটি দল আমদের সহজসরল মা-বোনদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক বড় বড় কিতাব ডিকশনারি নিয়ে যাবে বোঝানোর জন্য। এভাবে এখানে দিলে নেহায়েত জন্নাতে যাওয়া যাবে। এই পার্টিকে যেখানে পাবেন সেখানে ঠেকাবেন। গণতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়ার স্বাধীনতা আছে কিন্তু ঐ স্বাধীনতা নাই আপনার আমার ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। এমন কোন স্বাধীনতা নাই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য আমরা সহ্য করব না।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত পথসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমি জেলখানায় বন্দী ছিলাম। আপনারা আমার স্ত্রীকে আমার চেয়ে বেশি ভোটে নির্বাচিত করেছিলেন। তখন বিএনপির ২৯-৩০জন সংসদ সদস্যের মধ্যে আপনাদের পুত্রবধূ একজন ছিলেন। তখন ওয়ান ইলেভেনের সরকার বিভিন্ন ধরণের কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে রাস্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটা দুঃসংবাদ ছিল সেই ওয়ান ইলেভেনের সরকার ও তৎকালীন সংসদের কারচুপির নির্বাচন। ওই নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী দেশের যোগসাজশে ওয়ান ইলেভেনের ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিন সরকার ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। রক্ত দিতে হয়েছে। শহীদ হতে হয়েছে হাজারে হাজার। গণঅভ্যুত্থান করতে হয়েছে। তারপরে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এখন আমরা মুক্ত হয়েছি। নতুনভাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফেরত পেয়েছি। কিন্তু এখনও প্রয়োগ করতে পারিনি। আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।’
খালেদা জিয়াকে আপোষহীন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এদেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। এদেশের সকল জনগণের ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া আজকে অসুস্থ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তাঁর শরীরে স্লো পয়েজনিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি। দেশে চিকিৎসা ঠিকমতো নিতে পারেননি। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে একটা একাকীত্ব কারাবাস তাকে কাটাতে হয়েছে। সেই নির্মম অত্যাচারের মুখেও তিনি আপোষ করেননি। দুঃশাসনের সঙ্গে আপোষ করেননি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে আপোষ করেননি। তিনি ছিলেন এদেশের মানুষের পক্ষে। তিনি আছেন এদেশের মানুষের পক্ষে। তিনি আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন এদেশের গণতন্ত্রের জন্য।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জামাতে ইসলামকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন অমুক মার্কায় ভোট দিলে তরতরায়ে বেহেশতে যাবে। সেই রাস্তাটা কোনটা আমি জানি না। সেই মার্কায় ভোট দেওয়ার আগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের কি অবস্থা আল্লাহ মালুম। ধর্মের এরকম অপব্যাখ্যা কোনো সহী মুসলিমের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। দুনিয়াদারীর জন্য দ্বীনকে বিক্রি করে দেয়া, ধর্মকে বিক্রি করে দেয়া নাজায়েজ। আমরা শতকরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ মানুষ মুসলিম, প্রকৃতপক্ষে আখেরি নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রদর্শিত মদিনা ইসলামের অনুসারী। এখানে যারা সাহাবীকে অনুসরণ করবেন, রাসুলুল্লাহকে অনুসরণ করে জীবনযাপন করবেন তাদের পথ অবলম্বন করা আমরা বিশ্বাস করি এবং সবাইকে নসিহত করি। এখানে কি কোথাও আছে দুনিয়াতে কোনো মার্কায় ভোট দিলে কেউ আখিরাতে এটা পাবে? কিভাবে বলে? কেউ বলে যে এইবার ইসলামের পক্ষে একটা ভোট দেন। আরে ভাই, ইসলাম কি ভোটে দাড়াইছ? নিজেদের ঈমান নষ্ট করবেন আরেকজনের ঈমান নষ্ট করার জন্য কেন ভাষণ দেন। ইসলামে সরাসরি জান্নাতের টিকেট পেয়েছে দশজন। এর বাহিরে এগারো জনও না। এখন যারা জান্নাতের টিকেট বিক্রি করছে তারা হয়তো এগারো বার নম্বর হতে পারে। আসতাগাফিরুল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যাতে আখেরি জামানয় ইমান নষ্ট করার মতো কার্যকলাপ এখানে না চলে । পার্টির পেছনে ইসলাম থাকলে সেটা ইসলাম হয়ে যায় না।’
এর আগে তিনি সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান বন্দরে নামেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর পীর হাফেজ আব্দুল হাইয়ের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর খুটাখালী বাজারে অবস্থিত খুটাখালী ইউনিয়ন বিএনপির অফিস উদ্বোধন করেন। পরে খুটাখালী ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পাগলির ছড়া, ২, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ডুলহাজারার পীর হাফেজ আব্দুর রশিদের কবর জিয়ারত করেন।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কুতুবউদ্দিনের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলী, চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুর রহিম, কক্সবাজার জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলাদলের সভাপতি নাছিমা আকতার বকুল, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।





